গল্প
আসমানী ভালোবাসা
আবু ওয়াহেদ
দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দু’বছর পার হয়ে গেল। সেশন-জটহীন পথে এই দুই বছর পেরোতে কোন বেগ পেতে হয়নি। একটার পর একটা পরীক্ষা পার হয়ে রেজা এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে। সমান তালে চলছে সবকিছু। পড়ার টেবিলে পড়ছিল রেজা। মুঠোফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে “আম্মু”। কয়েক মিনিট কথা বলে ফোনটা রেখে দিল।
সাধারণত বাড়ির কারো সাথে কথা বলার পর মনটা স্বাভাবিক থাকে না তার। তারপরও গতকাল থেকে মনটা একটু খারাপ। কোন কিছুতেই মন বসছিল না। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। এলোমেলো কতগুলো চিন্তা এসে মাথায় জড়ো হয়েছে। হঠাৎ দরজায় শব্দ। ওপাশ থেকে ডাক শোনা যাচ্ছে-‘রেজা ভাই, রেজা ভাই’...
রেজা চিন্তার সাগর থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দিল। গোলাপি রংয়ের হাফ শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরে একগাল হাসি নিয়ে সালাম ছুড়ে দিল। রেজাও তাকে দেখে একটু না হেসে পারল না।
-‘ওহ তুমি, ভেতরে আস।’
বিছানায় শুয়ে শুয়েই রেজা জিজ্ঞেস করল-
-‘কি খবর শুভ, কোথাও যাচ্ছো?
কথার উত্তর না দিয়েই শুভ জিজ্ঞেস করল-
-‘কি ব্যাপার রেজা ভাই, তোমার মন খারাপ নাকি? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
রেজা একটি কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-
-আরে না, এমনিতেই একটু খারাপ লাগছে আর কি।
-চলো বাইরে থেকে একটু বেড়িয়ে আসি, ভালো লাগবে।
-না ভাইয়া, আজকে যেতে ভালো লাগছে না, আরেক দিন যাবো।
কোন কথা শুনতে না পেয়ে রেজা তাকাল শুভ’র দিকে। তার চোখে পানি টলটল করছে। রেজা বুঝতে পারলো সে কষ্ট পেয়েছে।
-‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, যাচ্ছি’ বলে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
শুভ রেজার এক বছরের জুনিয়র। দু’জন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়ে কিন্তু একই হলে থাকে। একজনের রুম থেকে আরেক জনের রুমের দুরত¦ও বেশি নয়। সিনিয়র-জুনিয়র হলেও তাদের দু’জনের সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মত। অবশ্য তারা একে অপরকে বন্ধুর মতই ভালোবাসে। একজনের বাড়ি থেকে কিছু পাঠালে আরেকজনকে ছাড়া খায় না। দু’জনের মাঝে এরকম সম্পর্ক দেখে আশেপাশের রুমের ছাত্ররা মনে করে নিয়েছে তারা একই সাথে পড়ে।
হলের মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে তারা বের হলো। প্রায়ই তারা বিকেল বেলা হাটতে বের হয়। আজও আগের মতোই, কোন ব্যতিক্রম হয়নি। বিস্তীর্ন ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক আর নির্মল পরিবেশে এভাবে হাটতে কার না ভালো লাগে। সুনিবিড় বৃক্ষছায়ার মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা শুনশান পড়ে আছে। ফাঁকা পরিবেশে হাটছে আর মিষ্টি আলাপচারিতায় মগ্ন দু’জন।
বিকেলের মৃদুমন্দ দখিনা বাতাসে গাছের পাতাগুলোয় সৃষ্টি হয়েছে কম্পন। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশ। মাঝে মাঝে ভারী বাতাসে গাছের হলুদ পাতাগুলো ঝরে পড়ছে রাস্তায়। আর তাদেরকে জানাচ্ছে ‘হলুদপত্র সংবর্ধনা’। রাস্তার ধারে ঘন বনের ওপাশে সূর্যটা হেলে পড়েছে। আকাশে হালকা মেঘের আড়াল ভেদ করে সূর্যকিরণ গাছের ফাঁক দিয়ে ঝিলিক দিচ্ছে আর তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। মাথার ওপর বিশাল আকাশ তার উদারতার গৌরব প্রদর্শনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের বিশাল হৃদয়ের উদারতার কাছে আকাশের বিশালতা ম্লান হয়ে গেছে।
পাশের নার্সারি থেকে বাহারি প্রজাতির ফুলগুলো সুবাস ছড়িয়ে তাদের প্রসংশা করছে। গোধুলির আবির রঙের রক্তিম আভা তাদেরকে করেছে মহিমান্বিত। আর সেই সাথে তাদেরকে বরণ করে নেয়ার জন্য দপদপ করে এগিয়ে আসছে নিশীথের তিমির।
দু’জনের মাঝে নেই কোন রক্তের সম্পর্ক, নেই কোন ভৌগোলিক সাদৃশ্য, কি যেন এক সম্পর্কের সুতোয় তারা বাঁধা। এ সম্পর্ক কোন দেশ-কাল মানে না, মানে না কোন আঞ্চলিক গন্ডি। তারা যে অতিপ্রাকৃতিক ভালোবাসায় প্রতিষ্ঠিত তা কোন বয়সের ফ্রেমেও বাঁধা যায় না।
রাস্তার দুধারের গাছগুলো শাখা দুলিয়ে তাদের সুন্দর সম্পর্কের স্বীকৃতি দিচ্ছে আর ফরিয়াদ জানাচ্ছে মহান রবের নিকট যেন এই দুই যুবক তাদের পবিত্র ভালোবাসার কারণে হাশরের দিনে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান করে নিতে পারে।
আহ! কি নির্মল এ সম্পর্ক, অনাবিল দুটি হৃদয় আর আসমানী তাদের ভালোবাসা। যেন এক অজ্ঞাত মহিমায় ভাস্বর ॥
সাধারণত বাড়ির কারো সাথে কথা বলার পর মনটা স্বাভাবিক থাকে না তার। তারপরও গতকাল থেকে মনটা একটু খারাপ। কোন কিছুতেই মন বসছিল না। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। এলোমেলো কতগুলো চিন্তা এসে মাথায় জড়ো হয়েছে। হঠাৎ দরজায় শব্দ। ওপাশ থেকে ডাক শোনা যাচ্ছে-‘রেজা ভাই, রেজা ভাই’...
রেজা চিন্তার সাগর থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দিল। গোলাপি রংয়ের হাফ শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরে একগাল হাসি নিয়ে সালাম ছুড়ে দিল। রেজাও তাকে দেখে একটু না হেসে পারল না।
-‘ওহ তুমি, ভেতরে আস।’
বিছানায় শুয়ে শুয়েই রেজা জিজ্ঞেস করল-
-‘কি খবর শুভ, কোথাও যাচ্ছো?
কথার উত্তর না দিয়েই শুভ জিজ্ঞেস করল-
-‘কি ব্যাপার রেজা ভাই, তোমার মন খারাপ নাকি? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
রেজা একটি কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল-
-আরে না, এমনিতেই একটু খারাপ লাগছে আর কি।
-চলো বাইরে থেকে একটু বেড়িয়ে আসি, ভালো লাগবে।
-না ভাইয়া, আজকে যেতে ভালো লাগছে না, আরেক দিন যাবো।
কোন কথা শুনতে না পেয়ে রেজা তাকাল শুভ’র দিকে। তার চোখে পানি টলটল করছে। রেজা বুঝতে পারলো সে কষ্ট পেয়েছে।
-‘ঠিক আছে, ঠিক আছে, যাচ্ছি’ বলে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
শুভ রেজার এক বছরের জুনিয়র। দু’জন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়ে কিন্তু একই হলে থাকে। একজনের রুম থেকে আরেক জনের রুমের দুরত¦ও বেশি নয়। সিনিয়র-জুনিয়র হলেও তাদের দু’জনের সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মত। অবশ্য তারা একে অপরকে বন্ধুর মতই ভালোবাসে। একজনের বাড়ি থেকে কিছু পাঠালে আরেকজনকে ছাড়া খায় না। দু’জনের মাঝে এরকম সম্পর্ক দেখে আশেপাশের রুমের ছাত্ররা মনে করে নিয়েছে তারা একই সাথে পড়ে।
হলের মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে তারা বের হলো। প্রায়ই তারা বিকেল বেলা হাটতে বের হয়। আজও আগের মতোই, কোন ব্যতিক্রম হয়নি। বিস্তীর্ন ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক আর নির্মল পরিবেশে এভাবে হাটতে কার না ভালো লাগে। সুনিবিড় বৃক্ষছায়ার মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা শুনশান পড়ে আছে। ফাঁকা পরিবেশে হাটছে আর মিষ্টি আলাপচারিতায় মগ্ন দু’জন।
বিকেলের মৃদুমন্দ দখিনা বাতাসে গাছের পাতাগুলোয় সৃষ্টি হয়েছে কম্পন। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশ। মাঝে মাঝে ভারী বাতাসে গাছের হলুদ পাতাগুলো ঝরে পড়ছে রাস্তায়। আর তাদেরকে জানাচ্ছে ‘হলুদপত্র সংবর্ধনা’। রাস্তার ধারে ঘন বনের ওপাশে সূর্যটা হেলে পড়েছে। আকাশে হালকা মেঘের আড়াল ভেদ করে সূর্যকিরণ গাছের ফাঁক দিয়ে ঝিলিক দিচ্ছে আর তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। মাথার ওপর বিশাল আকাশ তার উদারতার গৌরব প্রদর্শনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের বিশাল হৃদয়ের উদারতার কাছে আকাশের বিশালতা ম্লান হয়ে গেছে।
পাশের নার্সারি থেকে বাহারি প্রজাতির ফুলগুলো সুবাস ছড়িয়ে তাদের প্রসংশা করছে। গোধুলির আবির রঙের রক্তিম আভা তাদেরকে করেছে মহিমান্বিত। আর সেই সাথে তাদেরকে বরণ করে নেয়ার জন্য দপদপ করে এগিয়ে আসছে নিশীথের তিমির।
দু’জনের মাঝে নেই কোন রক্তের সম্পর্ক, নেই কোন ভৌগোলিক সাদৃশ্য, কি যেন এক সম্পর্কের সুতোয় তারা বাঁধা। এ সম্পর্ক কোন দেশ-কাল মানে না, মানে না কোন আঞ্চলিক গন্ডি। তারা যে অতিপ্রাকৃতিক ভালোবাসায় প্রতিষ্ঠিত তা কোন বয়সের ফ্রেমেও বাঁধা যায় না।
রাস্তার দুধারের গাছগুলো শাখা দুলিয়ে তাদের সুন্দর সম্পর্কের স্বীকৃতি দিচ্ছে আর ফরিয়াদ জানাচ্ছে মহান রবের নিকট যেন এই দুই যুবক তাদের পবিত্র ভালোবাসার কারণে হাশরের দিনে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান করে নিতে পারে।
আহ! কি নির্মল এ সম্পর্ক, অনাবিল দুটি হৃদয় আর আসমানী তাদের ভালোবাসা। যেন এক অজ্ঞাত মহিমায় ভাস্বর ॥
#
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ঈসায়ী
গাবতলী, ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই
ধন্যবাদ