মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও একটি প্রস্তাব
মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও একটি প্রস্তাব
আবু ওয়াহেদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যাঁরা জীবন বাজি রেখেছেন তাঁরা নিঃসন্দেহে বীর। দেশের সংকটের মুহুর্তে দেশের জন্যই হোক, আর নিজের পরিবার হত্যা নির্যাতনের প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্পেই হোক কিংবা অন্য যে কারণেই হোক তারা অস্ত্র ধরেছেন। জীবনের তোয়াক্কা না করে লড়েছেন। এজন্য ইতিহাস তাঁদেরকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
নতুন প্রজন্ম তাঁদেরকে মাথার মণি করে রাখবে। সাহসের দিশারী
হিসেবে তাঁদের পথ অনুসরণ করবে। তাঁদের বীরত্বের স্মৃতি থেকে নিজেদের ভবিষ্যৎ পথ খুঁজবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগণ এটিই চান।
কিন্তু হতাশার বিষয় হলো-বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসন্তোষ এমনকি বিদ্বেষও দানা বাঁধছে। অনেকে
মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও দ্বিধা করছেন না। এর পেছনে নতুন
প্রজন্মের সুবিধার অসম বন্টনই শতভাগ দায়ী। খোলামেলাভাবে বলতে গেলে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে
মেধাবী নতুন প্রজন্ম দারুনভাবে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে। ফলে যে মেধাবীদের কলম থেকে
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা বের হওয়ার কথা, তা
না হয়ে বের হচ্ছে অশ্রদ্ধা, বিদ্বেষ আর অসম্মান।
এ অবস্থা চলতে থাকলে সামাজিকভাবে জাতীয় বীরদের সম্মান ধীরে
ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাঁরা হাসি-ঠাট্টার পাত্র হয়ে পড়বেন যা দেশের জন্য, জাতির জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুবই
লজ্জা ও অসম্মানের।
এ পর্যন্ত দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব
হয় নাই।
বিভিন্ন সময়ে দলীয় বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ানো, পূর্বের সনদ ভুয়া বের হওয়া প্রভৃতি ঘটনা এই সমস্যাকে আরও জটিল করছে।
প্রকৃত যোদ্ধাগণ সম্মান পাবেন এটাই কাম্য। কিন্তু এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন
যাঁরা আজ পর্যন্ত স্বীকৃতিই পাননি। তাঁরা কায়ক্লেশে জীবন ধারণ করে চলছেন।
অন্যদিকে, সমাজের অনেক রুই-কাতলা দাপটের জোরে
মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুবিধা ভোগ করে চলছেন। সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই চোখ বন্ধ করে থাকে
না।
উপরন্তু ঐ সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী তরুণরা এসব দেখে আরো বেশি
ক্ষিপ্ত হচ্ছেন। তখন তাদের মনে মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধ শব্দগুলোর প্রতি
শ্রদ্ধাবোধ অবশিষ্ট থাকে না। স্বীকার করুন আর নাই করুন, বাস্তব অবস্থা এ-ই।
সরকার চাইলে এই ছোট্ট দেশটাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের খুব সহজেই
শনাক্ত করতে পারে। সদিচ্ছা থাকতে হবে। অন্য সব বিষয়ে যা-ই ঘটুক না কেন, মুক্তিযোদ্ধার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে
নিরপেক্ষভাবে তালিকা করা খুবই জরুরি।
একটি প্রস্তাবঃ এই সমস্যার সমাধানের সাথে মুক্তিযোদ্ধার শুধু সন্তান বা নাতি
পর্যন্তই নয়, বরং স্থায়ী সুবিধার
ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সঠিকভাবে সংখ্যা নিরূপণের পর প্রতিটি জেলা জেলা শহরে ২ টি
(প্রয়োজনে বেশি), বিভাগীয় শহর ও ঢাকায়
প্রয়োজন অনুসারে "মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার" নির্মাণ করা হবে। যেখানে
প্রত্যেকজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ২ টি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ থাকবে। একটিতে বসবাস
আরেকটি ভাড়া দিয়ে তার আয় থেকে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারবেন। আর এভাবে শুধু
সন্তান বা নাতি নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা
সুবিধা ভোগ করতে থাকবেন। এতে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানের যেমন কোনো ঘাটতি হবে না তেমনি
তাদের পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক দুরবস্থারও স্থায়ী সমাধান হবে। তাঁদের সামাজিক
মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
______________
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সাভার, ঢাকা।
We are proud of our freedom fighter.For them we got freedom. So we should soft feeling for them.
উত্তরমুছুনYou are right.
মুছুন